কন্টেন্ট রাইটিং – লেখালেখি করে আয়

আমরা প্রায় সবাই  ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করে আসছি। অন্তত একাডেমিক প্রয়োজনে হলেও আমাদের লিখতে হয়েছে ।কিন্তু আপনি কি জানেন এই লেখালেখি করেই চাইলে ঘরে বসে মাসে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব । জ্বি আমি কন্টেন্ট রাইটিং এর কথাই বলছি। আজকের ব্লগে আমি এই বিষয়টির পা থেকে মাথা পর্যন্ত ব্যাখা করবো । তাই মনোযোগ দিয়ে পুরো লেখাটি পড়ুন। চাইলে হাতে এক কাপ কফি নিয়ে বসতে পারেন । 

Table of Contents

কন্টেন্ট কি 

 

প্রথমেই আমাদের জানতে হবে কন্টেন্ট কি জিনিস । আসলে আধুনিক এই যুগের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে আমরা যে ছবি, ভিডিও, পোস্ট বা ইমেইল, পডকাস্ট, কিংবা ওয়েবসাইটে আমরা যে লেখালেখি গুলো দেখি এর সবই হলো কন্টেন্ট। এদেরকে Intellectual Property বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদও বলা হয়।

কন্টেন্ট কয় ধরনের ?

 

কন্টেন্ট মূলত ২ ধরনেরঃ 
ভিজ্যুয়াল( Visual) –   ছবি,ভিডিও, কোন মিউজিক বা পডকাস্ট । অর্থাৎ যেগুলো আমরা দেখি বা শুনি ।
লিখিত (Written) – ফেসবুক পোস্ট, বই, পেপার, টুইটারের টুইট, নিউজলেটার, মেইল বা কোন ওয়েবসাইটের তথ্য।
এর মধ্যে কিছু হলো অনলাইনের আর কিছু হলো অফলাইনের। সাধারনত যারা ভিজ্যুয়াল (Visual) কন্টেন্ট বানায় তাদের বলা হয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। আর যারা রিটেন কন্টেন্ট বানায় তাদের বলা হয় কন্টেন্ট রাইটার।

 

Credit: Unsplash

কন্টেন্ট রাইটিং কি?

 

সহজ ভাষায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য যখন কোন কন্টেন্ট লেখা হয় তখন তাকে কন্টেন্ট রাইটিং বলে । যেমনঃ কোন ওয়েবসাইটের জন্য লেখালেখি বা ব্লগিং , Social Media Page বা একাউন্টের জন্য Copywriting , Newsletter বা ইমেইল এই সবই হলো কন্টেন্ট রাইটিং । ফ্রিল্যান্সিং এর ভাষায় যদি বলি ‘ কন্টেন্ট রাইটিং ‘ মানে হলো কোন ওয়েবসাইটের ব্লগপোস্টের জন্য লেখালেখি করা। যারা এই সকল কন্টেন্ট লেখে তারাই মূলত কন্টেন্ট রাইটার ।

কন্টেন্ট রাইটিং গুরুত্বপূর্ণ কেন?

 

বর্তমান সময়টাই হলো কন্টেন্ট এর যুগ। কন্টেন্ট রাইটিং মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি গুলোর মধ্যে অন্যতম । একজন মানুষ যখন ফেসবুকে স্ক্রলিং করতে থাকে তখন আকর্ষনীয় একটা লেখাই পারে তাকে হুক করে ওই কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে জানাতে। এর মাধ্যমে টার্গেট অডিয়েন্সের নজর কাড়া যায়। সঠিক প্রচারনার মাধ্যমে সেল বাড়ানো যায়।

লেখক আর কন্টেন্ট রাইটার আলাদা কেনো ?

 

লেখক বলতে আমরা মূলত ফিকশন রাইটারদেরকে বুঝি যারা কোন বাস্তব বা কাল্পনিক ক্যারেক্টার নিয়ে গল্প , উপন্যাস, কবিতা লেখে । কিন্তু কন্টেন্ট রাইটার হলো নন-ফিকশন রাইটার। তারা কাল্পনিক কিছু নিয়ে লেখে না । লেখকদেরকে লেখালেখির জন্য খুব বেশি নিয়ম কানুন মানতে হয় না । কিন্তু একজন কন্টেন্ট রাইটারকে ভালো লেখা এবং লেখার মাধ্যমে কিভাবে কাস্টমার,ক্লাইন্টকে আকর্ষন করতে হয় তার নিয়ম কানুন জানতে হয়। কোন জায়গায় , কার উদ্দেশ্য সে লিখছে সেটি মাথায় রাখতে হয়। 

কন্টেন্ট রাইটিং কাদের জন্য ?

 

লেখালেখি বিষয়টার সাথে আমরা সবাই পরিচিত । পড়াশোনার জন্য হলেও আমাদের সৃজনশীল, রচনা , প্রবন্ধ , ভাবসম্প্রসারন এর মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতে হয়েছে । তাই বলে সবাই লেখালেখি পছন্দ করে এমনটাও কিন্তু নয় । লেখালেখি বিষয়টা একটা স্কিল । তাই যারা লেখালেখি পছন্দ করে এবং যাদের লেখালেখির হাত ভালো তাদের জন্য কন্টেন্ট রাইটিং হতে পারে একটি আকর্ষণীয় পেশা । এবং তারা চাইলে কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে একটি হ্যান্ডসাম এমাউন্টের ইনকাম জেনারেট করতে পারে ।

কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে কি কি উপায়ে আয় করা যায়?

 

কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে আয় করা যায়। যেমনঃ     
১/Copywriting – বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমনঃ ফেসবুক পেইজে,ইন্সটাগ্রামে,লিঙ্কডিনে ব্যবসায়িক প্রচারনার জন্য বিভিন্ন লেখালেখি করতে হয় যেখানে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে প্রমোশন করা হয় এবং কখনো কখনো কাস্টমারকে সরাসরি কিছু কিনতে বলা হয়। একেই কপিরাইটিং বলে । বিভিন্ন ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি গুলো তাই কপি রাইটার নিয়োগ দিয়ে থাকে । তাই চাইলে যেকেউ কপি রাইটার হয়ে আয় করতে পারে।
২/ফ্রিল্যান্সিং- ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস যেমনঃ ফাইভার, আপওয়ার্ক এ কাজ করে আয় করা যায় । বর্তমানে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করে বেশ ভালো এমাউন্টের টাকা আয় করছে। তবে তার জন্য আপনাকে ইংরেজিটা খুব ভালোভাবে পারতে হবে।

৩/ ভিডিও স্ক্রিপ্ট- ইউটিউব সহ বিভিন্ন কমার্শিয়াল পারপাসে তৈরী করা ভিডিও গুলো শুট করার আগে তার জন্য স্ক্রিপ্ট দরকার হয় । এই স্ক্রিপ্ট লেখার কাজটি করে থাকেন একজন কন্টেন্ট রাইটার। বর্তমানে প্রায় সবাই তাদের প্রচারনার জন্য ভিডিওর দিকে ঝুকছে এবং সামনে এই ইন্ডাস্ট্রিটা আরো বড় হবে। তাই একজন কন্টেন্ট রাইটারের জন্য স্ক্রিপ্ট লিখে আয় করা হতে পারে একটি চমৎকার পেশা ।
৪/গুগল এডসেন্স- নিজের ওয়েবসাইট তৈরী করে সেখানে নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল পোষ্ট করা যায় । এতে নির্দিষ্ট সংখ্যক অডিয়েন্স আসা শুরু করলে গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে আয় করা যায়।
৫/ এফিলিয়েট মার্কেটিং- Amazon , eBay, Daraz এমনকি দেশীয় কোম্পানি যেমন 10 Minute School , Rokomari এর মতো প্রায় সকল বড় বড় কোম্পানির এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম রয়েছে । এসব কোম্পানির সাথে এফিলিয়েট মার্কেটিং করার মাধ্যমেও আয় করা যায়।
এছাড়াও         
৬/ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর জন্য একটা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট প্রয়োজন পরে। পার্টনারদের বা কাস্টমারদের নিউজলেটার পাঠানো , ইমেইল মার্কেটিং করা , নিজেদের ওয়েবসাইটের জন্য লেখালেখি করার মতো বিভিন্ন কাজে কন্টেন্ট রাইটার প্রয়োজন হয় । তাই কোন কোম্পানির হয়ে ফুল বা পার্টটাইম কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে লেখালেখি করেও আয় করা যায়
৭/ অনলাইন ম্যাগাজিন, ক্লিকবেইট ওয়েবসাইট বা অনলাইন জার্নালে লেখালেখির মাধ্যমে আয় করা যায় ।
৮/ নিজের ব্যবসা বা পেইজের জন্য লেখালেখি করে আপনি চাইলে আরো বেশি কাস্টমারের কাছে রিচ করতে পারবেন । 

কন্টেন্ট রাইটার হবার যোগ্যতা গুলো কি কি ?

 

লেখালেখি করে যে আয় করা যায় এই বিষয়ে এতক্ষনে আমরা সুনিশ্চিত হতে পেরেছি এখন আমরা জানবো কন্টেন্ট রাইটার হবার জন্য আমাদের কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

১/ প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো ভালো লেখালেখি পারতে হবে কেননা লেখার মান ভালো না হলে এখানে ক্যারিয়ার করা যাবে না ।             
২/ নিজের Target Audience অর্থাৎ যাদের জন্য লিখছেন তাদেরকে ভালো মতো বুঝতে হবে । তাদের বয়সসীমা, জেন্ডার, তারা কোন ধরনের লেখা পড়তে চাচ্ছে বা কি বিষয়ে তারা জানতে বা পড়তে চাচ্ছে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
৩/ কোন প্ল্যাটফর্মে কোন ধরনের কন্টেন্ট কিভাবে লিখতে হয় তার নিয়ম জানতে হবে । কোন কোম্পানির জন্য মেইল বা নিউজলেটার লেখা আর ফেসবুক পেইজের জন্য পোস্ট লেখার নিয়ম নিশ্চয়ই এক নয় । তাই বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট লিখতে পারতে হবে ।     
৪/ সহজ ও সাবলীল ভাষায় লিখলে পাঠকরা পড়ে মজা পায় এবং স্বাচ্ছন্দবোধ করে ।তাই সহজ ভাবে লেখার চেষ্টা করতে হবে ।
৫/ SEO (Search Engine Optimization) এর কাজ হলো এমন ভাবে ওয়েবসাইটের জন্য কন্টেন্ট লেখা যেনো গুগলে সার্চ করলে সেই লেখা সবার উপরে আসে । তাই লেখালেখির পাশাপাশি SEO টাও ভালোমতো শিখে ফেলা উচিত ।             
৬/Affiliate Marketing এর ক্ষেত্রে সুন্দরভাবে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের বর্ণনা লেখা শিখতে হবে। তাহলে কন্টেন্ট লিখে আয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন চাকরী পাবারও সম্ভবনা রয়েছে।
৭/ ওয়েবসাইটে লেখালেখি , আর্টিকেল ,ভিডিওর জন্য স্ক্রিপ্ট, ই-বুক , ব্লগ এই সবই যেহেতু কন্টেন্ট তাই আপনাকে সব ধরনের কন্টেন্টই লিখতে পারতে হবে । তাহলেই আপনি সবার জন্য, সব প্রয়োজনে লেখালেখি করে আয় করতে পারবেন ।               
৮/ প্রত্যেকেরই নিজস্ব লেখার স্টাইল রয়েছে । চেষ্টা করবেন  নিজের সেই স্টাইলে লেখার । তাহলে কন্টেন্ট রাইটিং এর জগতে আপনার নিজস্ব একটা অথোরিটি , একটা পরিচয় তৈরী হবে।
৯/ লেখালেখির সময় আপনাকে অবশ্যই  গ্রামার ,বানান এসবের দিকে খেয়াল রাখতে হবে । অনিচ্ছাকৃত হলে সেটা ভিন্ন বিষয় তবে চেষ্টা করতে হবে নির্ভুল রাখার।     
১০/ আপনার লেখা অবশ্যই ইউনিক এবং  প্লেজেরিজম Plagiarism মুক্ত হতে হবে । কপি পেস্ট করে বা অন্যের লেখা চুরি করে লেখা যাবে না । তবে ইনফরমেশন এর জন্য অন্য কোন সোর্স থেকে নেওয়া হলে অবশ্যই তার ক্রেডিট দিতে হবে।

এক্সট্রা টিপ্স

 

১/আগে গুগল নোট, ডক,Notion App  বা যেকোন নোট টেকিং এপসে আগে নোট করে নিতে পারেন। পরে চাইলে সেখান থেকে কপি করে ডিরেক্ট ব্যবহার করতে পারবেন।

২/ কন্টেন্টের আউটলাইন ঠিক করে নিন। পুরো লিখাটিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করুন। লেখায় হেডিং ,সাবহেডিং ব্যবহার করুন।
৩/ Rambling মানে হলো এক টপিকে লেখা শুরু করে অন্য টপিকে চলে যাওয়া। এমনটা যেনো না হয় তার জন্য কন্টেন্টর মূল পয়েন্টে স্থির থাকার চেষ্টা করুন ।
৪/ প্রথম দিকে আপনি চাইলে কন্টেন্ট রাইটিং এর বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে পারেন। সেখানে প্রায়ই বিভিন্ন কাজের পোস্ট ও লোক নিয়োগের পোস্ট করা হয় ।সেখান থেকে কাজ করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়াতে পারেন ।
৫/যেহেতু লোকাল কাজ গুলো সাধারণত, ফেসবুক গ্রুপ বা যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নেয়া হয়ে থাকে সেহেতু কাজ নেয়ার আগে অবশ্যই ক্লায়েন্টের প্রোফাইল ঘেটে দেখা উচিত।যাচাই বাছাই করে বিশস্ত ও ভালো মনে হলে কাজ নিন।

সবশেষে

 

দিনশেষে সবাই আসলে ব্যবসাই করে। আপনি হয়তো চাকুরি করছেন কিন্তু আপনার কোম্পানি ঠিকই কোন না কোন ভাবে ব্যবসা করছে ।তাই ব্যাবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে আপনার সকল প্রকার লেখালেখির একটাই উদ্দেশ্য আর তা হলো পটেনশিয়াল কাস্টমারকে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে জানানো । একটা কোম্পানি তখনই আপনাকে বেতন দিয়ে রাখবে যখন আপনার দ্বারা তার মার্কেটিং বা সেল হবে এবং আপনি তার ব্যবসায় ইম্প্যাক্ট ফেলতে পারবেন । তাই নিজের টার্গেট অডিয়েন্সই হোক কিংবা পটেনশিয়াল কাস্টমার , লেখালেখির মাধ্যমে তাদেরকে ইম্প্রেস এবং মন জয় করতে পারাটাই একজন কন্টেন্ট রাইটার এর সফলতা ।

Source of information:

 

১/ বই- কন্টেন্ট রাইটিং । অজন্তা রেজওয়ানা মির্জা। অদম্য প্রকাশ , ২০২৪
২/ ইন্টারনেট 

About The Author

Md Imran Hossain

Md Imran Hossain

Content Writer , Youtuber

Share This Post

Facebook
Twitter
LinkedIn

You May Also Like

লেখালেখি করে আয়

১/ কন্টেন্ট কি?২/ কন্টেন্ট কয় ধরনের ?৩/ কন্টেন্ট রাইটিং কি?★ কন্টেন্ট রাইটিং গুরুত্বপূর্ণ কেন?৪/ কন্টেন্ট রাইটিং কাদের জন্য ?কন্টেন্ট রাইটিং

Read More »

Email - Sign Up

Scroll to Top